ঘুমাতে যাওয়ার আগে স্মার্টফোনের ব্যবহার ডেকে আনতে পারে আমাদের জন্য মহা বিপদ।এর ফলে আমাদের যেমন ঘুমোর উপরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে আবার অন্যদিকে মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
এছাড়াও সম্প্রতি একদল গবেষক তাদের গবেষণায় আমাদেরকে জানিয়েছেন যে, ঘরে প্রতি দশজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মধ্যে স্মার্টফোনে এক জন আসক্ত। আর এই আসক্তি যেমন তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে তেমনি আবার তাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।
এছাড়াও লন্ডনের কিংস কলেজের এক হাজার ৪৩ শিক্ষার্থীর ওপর জরিপ চালিয়ে এ তথ্য পাওয়া গেছে যে, তাদের, ৪০৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে স্মার্টফোনে আসক্তি পাওয়া গেছে। আর এদের দুই-তৃতীয়াংশ ঘুমজনিত নানা রকম সমস্যায় ভুগছে।
এই জরিপ থেকে আরো বলা হয় যে, যারা মধ্যরাতে অথবা দিনে চার ঘণ্টা স্মার্টফোন ব্যবহার করে তাদের মধ্যে এ আসক্তি দেখা গেছে অন্যদের তুলনায় কিছুটা বেশি পরিমাণে। তাই আমাদের উচিত একটি নির্দিষ্ট টাইম পর্যন্ত স্মার্টফোন ব্যবহার করা।
প্রয়োজন ছাড়া স্মার্ট ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে থেকে নিজের মূল্যবান সময় নষ্ট করা একদমই উচিত নয়। তাহলে এর কুফল বইতে হবে দেশ এবং জাতিকে।আমাদের দেশের যুব সমাজের উন্নতি ঘটলেই তো দেশ এবং জাতি এগিয়ে যাবে উন্নতির লক্ষ্যে।
গবেষকরা আরও একটি বিষয় লক্ষ্য করেছেন যে, আসক্তদের যদি স্মার্টফোন ব্যবহার করতে না দেওয়া হয় তাহলে তারা অবসাদে ভোগেন এবং অনেকটা বিচলিত অনুভব করেন। আর তারা এই যন্ত্র ব্যবহারের ফলে জীবনের অনেক উপভোগ্য ঘটনা থেকে বঞ্চিত হন যেটা তাদের পছন্দ নয়।
গবেষকরা আরো বলেন যে, আসক্তদের বেশিরভাগ এশিয়ান বংশোদ্ভূত। আর এর সংখ্যা অংশ গ্রহণকারীদের প্রায় ৪৬ ভাগ, কৃষ্ণাঙ্গদের সংখ্যা ৪২ এবং অন্যান্যরা ৩৮ ভাগ রয়েছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো যে, সাদা বর্ণের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে কম আসক্ত হয়ে থাকেন।
ফ্রন্টিয়ার্স ইন সাইকিয়াট্রি জার্নালে এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।
গবেষণা সহকারী ডা. বেন কারটার জানান যে, স্মার্টফোন আসক্তির ফলে ঘুমের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েএবং এর থেকে মানসিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে।তাই স্মার্টফোনের আসক্তি থেকে আমাদের সকলেরই সতর্ক থাকা উচিত। আর প্রয়োজন ছাড়াই স্মার্টফোন ব্যবহার করা একদমই উচিত নয়।
গবেষকরা আরো বলেন, যারা দিনে দুই ঘণ্টা স্মার্টফোন ব্যবহার করেন তাদের মধ্যে আসক্তির লক্ষণ দেখা যায় অনেকটা কম। কিন্তু যারা পাঁচ ঘণ্টা ব্যবহার করেন তারা পুরোপুরি আসক্ত আসক্ত বলে গবেষকগণ দাবি করেন।
এছাড়াও, ঘুমাতে যাওয়ার কতক্ষণ আগে তারা স্মার্টফোন ব্যবহার বন্ধ করেছেন তাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর যারা ঘুমের অন্তত এক ঘণ্টা আগে যোগাযোগের এ অত্যাধুনিক যন্ত্র ব্যবহার বন্ধ করেছেন তাদেরকে ধরা হয় কম আসক্তির দলে।
এছাড়াও যাদের বয়স একুশ বছরের নিচে তারা এ যন্ত্রে বেশি আসক্ত হয়ে থাকেন।
আরো পড়ুন... বাচ্চাদের মোবাইল ফোনের ব্যবহার কমানোর সহজ উপায়
ডা. বারনাকা ইউবিকা এও বলেন যে, ঘুমাতে যাওয়ার কতক্ষণ আগে স্মার্টফোনটি বন্ধ করা হলো তার গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রভাব আমাদের ঘুমের উপরে পড়ে। আর এই অভ্যাস মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও মারাত্মকভাবে ক্ষতিকর। বিশেষ করে তরুণদের উচিত পর্যাপ্ত ঘুমের প্রতি মনোযোগী হওয়া।
স্মার্টফোনের আসক্তি মানুষের শারীরিক মানসিক ভাবে ক্ষতি করার পাশাপাশি মানুষের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছে তার মূল্যবান সময়। তবে হ্যাঁ যদি কেউ স্মার্ট ফোন দিয়ে ভাল কোন কিছু শিখে অথবা ভালো কোন কাজ করে সেটা দোষের নয়।
মানুষের জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হল সময়। যেটাকে উন্নতশীল দেশগুলোর মানুষজন খুবই গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তাই তারা বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের কাতারে রয়েছেন।আমাদের কারোই উচিত নয় অযথাই এন্টারটেনমেন্টের জন্য মোবাইল স্ক্রিনের দিকে ঘন্টার পর ঘন্টা তাকিয়ে সময় কাটিয়ে দেয়া।
এরকম কি করলে আমরা মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্য ক্ষতির সম্মুখীন হবে আর এতে কোন সন্দেহ নেই।তাই আমাদের সকলেরই উচিত জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে হিসাব করে ব্যয় করা অথবা কাজে লাগানো।